Welcome to my information site

Best information site: অ্যাঞ্জেলিনা জোলি :

Tuesday 2 October 2012

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি :

                           অ্যাঞ্জেলিনা জোলি (Angelina Jolie)

 জন্ম অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ভট|

জুন ১৯৭৫ (বয়স ৩৭) পেশা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, প্রযোজক কার্যকাল ১৯৮২; ১৯৯৩বর্তমান দাম্পত্য সঙ্গী জনি লি মিলার (১৯৯৬১৯৯৯)
বিলি বব থর্নটন (২০০০২০০৩) সঙ্গী ব্র্যাড পিট (২০০৫বর্তমান) সন্তান জন ( ছেলে মেয়ে) পিতা-মাতা জন ভট (পিতা)
মার্শেলিন বার্ট্রান্ড (মাতা)|
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি (ইংরেজি: Angelina Jolie) (জন্ম: জুন, ১৯৭৫; অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ভট) একজন জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি তিনবার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, দুইবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার এবং একবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। চলচ্চিত্র জগতের বাইরে ২০০১ সালে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী মানবতার প্রচার, এবং বিশেষ করে শরণার্থীদের জন্য কাজ করার জন্য জোলি বিশেষভাবে সমাদৃত। একাধিকবার তিনিবিশ্বের সেরা সুন্দরীনির্বাচিত হয়েছেন। রূপালী পর্দার অন্তরালে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে
১৯৮২ সালে লুকিনটু গেট আউট চলচ্চিত্রে বাবা জন ভটের সাথে একটি শিশু চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে জোলির আবির্ভাব হয়। তবে পেশাদার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর অভিষেক ঘটে স্বল্প বাজেটের ছবি সাইবর্গ (১৯৯৩)- অভিনয়ের মাধ্যমে। তাঁর অভিনীত প্রথম বড় মাপের ছবি হ্যাকারস (১৯৯৫) ছবিতে তিনি নামভূমিকায় অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তাঁকে জর্জ ওয়ালেস (১৯৯৭) জিয়া (১৯৯৮)-এর মতো সমালোচক-নন্দিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। নাট্য চলচ্চিত্র গার্ল, ইন্টারাপ্টেড (১৯৯৯)- অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ভিডিও গেম নায়িকা লারা ক্রফ্ চরিত্র নিয়ে লারা ক্রফ্: টুম্ব রেইডার (২০০১) চলচ্চিত্রে অভিনয় তাঁর তারকাখ্যাতি আরও বাড়িয়ে দেয়। মূলত এরপর থেকেই জোলি হলিউডের অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক-প্রাপ্ত একজন অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন তাঁর চলচ্চিত্র-জীবনের সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক সাফল্য যে দুটি চলচ্চিত্র থেকে এসেছে সেগুলো হলো অ্যাকশন-কমেডিধর্মী মি. এন্ড মিসেস. স্মিথ (২০০৫) এবং অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র কুং ফু পান্ডা (২০০৮)
ব্যক্তিগত জীবনে জোলি দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রথমবার অভিনেতা জনি লি মিলার দ্বিতীয়বার বিলি বব থর্নটনের সাথে। পরবর্তীতে উভয়ের সাথেই তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ২০০৫ সাল থেকে জোলি আরেক খ্যাতিমান মার্কিন অভিনেতা ব্র্যাড পিটের সাথে দাম্পত্যসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। যদিও দীর্ঘ কালব্যাপী এধরণের সম্পর্ক বজায় রাখাসত্বেও অদ্যাবধি তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। জোলি-পিট যুগলের এধরণের বিবাহবহির্ভূত দাম্পত্য সম্পর্ক বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে বারংবার আলোচিত হয়েছে। তাঁদের সন্তান-সন্ততির সংখ্যা ছয়; এর মধ্যে রয়েছে নিজেদের তিন সন্তান শিলোহ, নক্স ভিভিয়ান; এবং বিভিন্ন সময়ে দত্তক নেয়া তিন সন্তান ম্যাডক্স, প্যাক্স জাহারা

প্রাথমিক জীবন পরিবার

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে জোলির জন্ম। তার মা-বাবার নাম যথাক্রমে মার্শেলিন বার্ট্রান্ড জন ভট; মা-বাবা উভয়েই ছিলেন পেশাদার অভিনয়শিল্পী। এছাড়া জোলির আত্মীয়বর্গের ভেতরেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ছাপ সুস্পষ্ট। সম্পর্কের দিক থেকে জোলি, চিপ টেইলরের ভ্রাতুষ্পুত্রী, জেমস হ্যাভেনের বোন, এবং জ্যাকুইলিন বিসেট ম্যাক্সিমিলিয়ান শেলের ধর্মকন্যা। বাবার দিক থেকে জোলি চেকোস্লোভাকীয় জার্মান বংশোদ্ভূতআর মায়ের দিক থেকে ফরাসি কানাডীয় বংশোদ্ভূত। তার মায়ের ভাষ্য অনুসারে তার মধ্যে ইরোকয় বংশের ছাপও বিদ্যমান যদিও তাঁদের এমন কথার প্রেক্ষিতে ভটের ভাষ্য, তাঁর স্ত্রী বার্ট্রান্ডঠিক ইরোকয় নয়’, এবং তাঁর সাবেক স্ত্রীর বংশকে চমকপ্রদ হিসেবে প্রচার করার উদ্দেশ্য থেকেই তাঁরা এমনটি বলে থাকে

১৯৭৬ সালে তার মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের পর জোলি তার ভাই উভয়েই তাদের মায়ের কাছে বেড়ে উঠতে থাকেন। বিচ্ছেদ-পরবর্তী এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে তার মা নিজের অভিনয়ের উচ্চাশা বিসর্জন দেন, এবং সন্তানদের সাথে নিয়ে নিউ ইয়র্কের প্যালিসেডে চলে যান শৈশব থেকেই জোলি নিয়মিতভাবে ছবি দেখতেন ছবি দেখার পর মায়ের কাছে, অভিনয় করার ব্যাপারে তার আগ্রহ প্রকাশ করতেন। কিন্তু তিনি কখনোই তার বাবার কারণে অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হননি জোলির বয়স যখন এগারো, তখন তার পরিবার আবার লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিরে আসে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে এবার তিনি অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই সূত্র ধরে তিনি লি স্ট্র্যাসবার্গ থিয়েটার ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দুই বছর ধরে অভিনয়ের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই থিয়েটার ইনস্টিটিউটে থাকাকালীন সময়ে তিনি বেশ কিছু মঞ্চনাটকেও অভিনয় করেন
চৌদ্দ বছর বয়সে জোলি তার অভিনয় শিক্ষা থেকে সরে গিয়ে একজন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেনতখন তিনি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালকদের মতো কালো পোশাক পরা শুরু করেন। এছাড়াও তিনি তার চুলের রং পরিবর্তন করে বেগুনী করেছিলেন, এবং কালীন প্রেমিকের সাথে মোশিংয়ে যাওয়াও শুরু করেছিলেন দুই বছর পর প্রেমিকের সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর তিনি তার মায়ের বাড়ি থেকে কয়েক গলি দূরে অবস্থিত একটি গ্যারাজের ওপরের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন কিছুদিন পর তিনি আবারও অভিনয় শিক্ষায় ফিরে যান, এবং কয়েকবার সেমিস্টার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরেও শেষপর্যন্ত হাই স্কুলের গণ্ডি পার হন। বিষয়গুলো সম্পর্কে জোলির বক্তব্য, “আমি মূলত এখনোউল্কিওয়ালা এক বদমাশ পিচ্চিএবং আমি থাকবোও


১৯৮৮ সালে অস্কার অনুষ্ঠানে জন ভট, পেছনে জোলিকে দেখা যাচ্ছে
পরবর্তীতে জোলি ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিল্ হাই স্কুলে (পরবর্তী নাম মরেনো হাই স্কুল) ভর্তি হন। সেখানে তার সময় কাটতো অনেকটা বিচ্ছিন্ন একাকী অবস্থায়, কারণ স্কুলের ছেলেমেয়েরা সবাই ছিলো সেই এলাকার অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান। অপরদিকে জোলির মা তার স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। অধিকাংশ সময়ই জোলিকে অন্যের ব্যবহৃত পুরোন জামাকাপড় ব্যবহার করতে হতো। স্বাতন্ত্রসূচক বেশভূষার (যেমন: হ্যাংলা স্বাস্থ্য, রোদচশমা ব্রেস পরে থাকা ইত্যাদি) জন্য স্কুলের অন্যান্য ছেলেমেয়েরা জোলিকে উত্যক্ত করতো। মডেল হওয়ার জন্য তার প্রথম চেষ্টাটি বিফলে গেলে জোলির আত্মবিশ্বাসেও চিড় ধরে। সেসময় প্রায়ই তিনি নিজের শরীর কাটাকাটি করার মাধ্যমে নিজেকে রক্তাক্ত করতেন। পরে তিনি এসম্বন্ধে বলেছিলেন, “আমি সবসময়ই ছুরি সংগ্রহ করতাম আর এগুলো আমার ধারেকাছেই থাকতো। কিছু কারণে, কাটাকাটি করার এই আচরণটি, এবং ব্যথা অনুভব করাআমাকে অনুভব করতে সাহায্য করতো যে, আমি বেঁচে আছি, এবং আমি কিছুটা মুক্তি পাচ্ছি। এটা আমার কাছে ছিলো কিছুটা রোগনিরাময়ের মতো।
জোলির সাথে তার বাবা জন ভটের সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল দূরত্বপূর্ণ। তারা দুজন পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। লারা ক্রফ্: টুম্ব রেইডার চলচ্চিত্রে তারা একসঙ্গে বাবা-মেয়ের ভূমিকায় অভিনয়ও করেন কিন্তু হঠাকরেই, ২০০২ সালের জুলাইয়ে জোলি তার নামের শেষাংশ থেকে আইনগতভাবেভটশব্দটি বাদ দিয়ে শুধুঅ্যাঞ্জেলিনা জোলিকরার আবেদন করেনদুই মাস পর, ২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তার নাম আইনগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে শুধুঅ্যাঞ্জেলিনা জোলিহয়। ওই বছরেই অ্যাকসেস হলিউড নামের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ভট দাবি করেন যে, তার মেয়েরমারাত্মক মানসিক সমস্যাআছে। এই কথার প্রেক্ষিতে জোলি পরে বলেন যে, তিনি তার বাবার সাথে আর সম্পর্ক চালিয়ে যেতে অপারগ। তার কথায়: “আমার বাবার সাথে আমি কথা বলি না, আমি তার সামনে রাগারাগিও করি না। আমি বিশ্বাস করি না কারো পরিবার তাদের বংশধর তৈরি করে, কারণ আমার ছেলেটি দত্তককৃত, আর পরিবারটি অর্জিত তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তিনি তার বাবার সাথে দূরত্বের কারণগুলো নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে চাননি, কিন্তু তার একটা দত্তক নেওয়া ছেলে আছে, এবং এবং তিনি মনে করেন না ভটের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়াটা এখন আর খুব একটা ভালো হবে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জোলি পুনরায় তার বাবার সাথে দেখা করেন সম্পর্ক উন্নয়নের আভাস দেন। ছেলেমেয়েদেরসহ জোলি, পিট, ভট ইতালির ভেনিসে একত্রিত হন। সে সময় জোলি ভেনিসে দ্য ট্যুরিস্ট চলচ্চিত্রে কাজ করছিলেন

পেশাজীবন

প্রাথমিক কাজ (১৯৯৩১৯৯৭)

একজন ফ্যাশন মডেল হিসেবে চৌদ্দ বছর বয়সে জোলির পেশাজীবন শুরু হয়। তিনি মডেলিং করতেন মূলত লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক লন্ডনে সে সময়ে তৈরি বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতে তাকে দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে মিট লোফের (‘রক অ্যান্ড রোল ড্রিমস কাম থ্রু’), অ্যানতোনেল্লো ভেনেডিত্তির (‘আলতা মারিয়া’), লেনি ক্র্যাভিট্জের (‘স্ট্যান্ড বাই মাই ওমেন’), এবং দ্য লেমনহেডসের (‘ইট' অ্যাবাউট টাইম’) ষোলো বছর বয়সে মঞ্চ থেকে তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু, এবং তাঁর প্রথম চরিত্রটি ছিলো একজন জার্মান প্রতাপশালীর। মূলত বাবার থেকেই জোলির অভিনয়ের হাতেখড়ি। অভিনয় শেখার জন্য তিনি তাঁর বাবার শিখন প্রক্রিয়া লক্ষ করতেন। তিনি মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতেন, এবং আচরণ বাহ্যিকতায় ঠিক তাদের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করতেন। সে সময় বাবার সাথে জোলির সম্পর্ক পরবর্তীকালের মতো এতোটা শীতল ছিলো না। তখন জোলির কাছে তাঁরা দুজনেই হচ্ছেননাট্যজগতের রাজা-রাণী
জোলির ভাই জেমস হ্যাভেন যখন ইউএসসি স্কুল অফ সিনেম্যাটিক আর্টসের শিক্ষার্থী, তখন তাঁর পাঁচটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্রে জোলি অভিনয় করেন। যদিও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে জোলির পেশাজীবন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে; অল্প বাজেটের চলচ্চিত্র সাইবর্গ - নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে। সেখানে তাঁর চরিত্রের নাম ছিলো ক্যাসেলাক্যাশরিজ, যে কিনা মানুষের কাছাকাছি একটি রোবট রোবটটিকে এমনভাবে নকশা করা হয় যেন সে নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় সদরদপ্তরে নিয়ে যেতে প্রলুব্ধ করে, অতঃপর নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে জোলি দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একটি হচ্ছে স্বাধীন চলচ্চিত্র উইদাউট এভিডেন্স, এবং অপরটি রহস্য চলচ্চিত্র হ্যাকারস হ্যাকারস- তিনি কেটএসিড বার্নলিবি চরিত্রে পার্শ্বভূমিকায় অভিনয় করেন। এটি ছিলো জোলির অভিনয় জীবনের প্রথম হলিউড চলচ্চিত্র। এবং এখানেই জোলির সাথে পরবর্তীতে তাঁর প্রথম স্বামী জনি লি মিলারের পরিচয় হয়। চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মন্তব্য ছিলো, “কেট (অ্যাঞ্জেলিনা জোলি) আসলেই অসাধারণ। তাঁর সহঅভিনেতার চেয়েও তাঁর মুখখানি ছিলো নিষ্প্রতিভ, এবং এই বিরল নারী হ্যাকার যিনি কিনা অর্ধস্বচ্ছ টপস পরিহিত অবস্থায় মনোযোগের সাথে কিবোর্ড নিয়ে কাজে বসেন। তাঁর গুরুগম্ভীর আকর্ষণটুকুকে বাদ দিলে চরিত্রটির যা দরকার ছিলো তার সবই তাঁর মাঝে বিদ্যমান। মিজ জোলির ভঙ্গিমাটি ছিলো খুবই মিষ্টি, একেবারে তাঁর বাবা জন ভটের নিষ্পাপ ভূমিকার মতো।ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য না দেখাতে পারলেও, এর ভিডিওচিত্রটি মুক্তি পাবার পর এটি প্রশংসিত হয়
পরবর্তী বছরে জোলি রম্য চলচ্চিত্র লাভ ইজ অল দেয়ার ইজ (১৯৯৬)- জিনা মালাসিসি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি অনেকাংশে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকের একটি অঙ্কের ওপর ভিত্তি করে রচিত, এবং অনেকটা এর সাম্প্রতিক সংস্করণের মতো। তবে মানের দিক থেকে এটি ততোটা উঁচুদরের ছিলো না। চলচ্চিত্রের কাহিনী গড়ে উঠেছিলো নিউ ইয়র্কের ব্রনক্সে বসবাসরত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রেস্তোরাঁ মালিকের পরিবারকে কেন্দ্র করে। এছাড়াও বছর জোলি মোহাভি মুন নামে একটি পথচলচ্চিত্রে ইলিয়ানর রিগবি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটিতে কাহিনী অনেকটা এরকম: মাকে দেখতে যাওয়ার পথে মোহাভি মরুভূমি পাড়ি দেবার সময় পথিমধ্যে এক রেস্তোরাঁয় জোলির (ইলিয়ানর রিগবি) সাথে ড্যানি আয়েলোর (অ্যাল ম্যাকর্ড) দেখা হয় তাঁরা পরস্পরের প্রেমে পড়েন। একই বছর জোলি ফক্সফায়ার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। এখানে তাঁর চরিত্রের নাম ছিলো মার্গারেটলেগ্স্যাডোভ্স্কি নামের এক কিশোরীর। ছবিতে লেগ্ পাঁচ কিশোরীর একজন। তাঁদের ওপর যৌননিপীড়ন চালানোর কারণে তাঁরা তাঁদেরই এক শিক্ষককে প্রহার করে। ছবিতে জোলির অভিনীত চরিত্রটি সম্পর্কে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর মন্তব্য, “এই চরিত্রটি তৈরিতে প্রচুর অবাঞ্ছিত বিষয়বস্তুর আশ্রয় নেওয়া হয়েছে; কিন্তু জোলি, ভটের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী কন্যা, সর্বদাই এই দ্বিমুখীতাকে জয় করার ক্ষেত্রে সচেষ্ট ছিলেন। ছবির কাহিনী ম্যাডির জবানীতে বিবৃত হলেও ছবিটির মূল বিষয় এবং অনুঘটকরূপে ভূমিকা পালন করেছেন মূলত লেগ্স।
১৯৯৭ সালে জোলি লস অ্যাঞ্জেলেসের অপরাধজগতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি রহস্যচলচ্চিত্র প্লেয়িং গড- ডেভিড ডুকভ্নি চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি সমালোচকদের দৃষ্টিতে মানসম্পন্ন ছিলো না, এবং রজার এবার্ট মন্তব্য করেন, “সাধারণত কঠিন আক্রমণাত্মক চরিত্রে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে অভিনয় করেন; অপরাধীর প্রেমিকা হিসেবে তাঁর অভিনয় সবসময়ই রমণীয়, এবং হয়তো তিনি তাই।এরপর তিনি টেলিচলচ্চিত্র ট্রু উইমেন- অভিনয় করেন। এটি ছিলো একই নামের একটি ঐতিহাসিক রোমান্টিক নাটকের একটি অঙ্কের চলচ্চিত্ররূপ। নাটকটি ছিলো আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের একটি অন্যতম জনপ্রিয় নাটক। আর এটির মূল ধারণাটি এসেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস-নিবাসী কথাসাহিত্যিক জেনিস উডস উইন্ডেলের লেখা একটি বই থেকে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সেবছর তাঁকে রোলিং স্টোনসের মিউজিক ভিডিও ‍‘এনিবডি সীন মাই বেবি?’-তেও দেখা যায়

আলোচিত সাফল্য (১৯৯৭২০০০)

১৯৯৭ সালে জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র জর্জ ওয়ালেস- কর্নেলিয়া ওয়ালেস চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জোলির পরিচিতি বাড়তে শুরু করে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন এমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ছবিতে আলাবামার গভর্নর জর্জ ওয়ালেসের চরিত্রে অভিনয় করেন গ্যারি সিনিস ছবির পরিচালক জন ফ্রাঙ্কেনহাইমার সমালোচকদের দৃষ্টিতে প্রশংসিত হন, এবং চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকটি পুরস্কারও লাভ করে। এর মধ্যে আছে সেরা মিনি ধারাবাহিক/টেলিচলচ্চিত্র বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার। এই চলচ্চিত্রে দৈনন্দিন জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন এক সাবেক গভর্নরের দ্বিতীয় স্ত্রী ভূমিকায় অভিনয় করেন জোলি। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় এই গভর্নর গুলিবিদ্ধ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হন
১৯৯৮ সালে তিনি এইচবিও প্রযোজিত চলচ্চিত্র জিয়া-তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন, এবং এখানে তিনি সুপারমডেল জিয়া কারাঞ্জি ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটির মুখ্য বিষয়গুলো ছিলো যৌনতা, মাদক, আবেগ, এবং মাদকাসক্তির কারণে কারাঞ্জির শারীরিক পেশাগত জীবনের ক্রম অধঃপতন; অবশেষে সবকিছু থেকে তাঁর হাল ছেড়ে দেওয়া এইডসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ। জিয়া-তে তাঁর অভিনয় সম্পর্কে চলচ্চিত্র সমালোচক ভেনেসা ভেন্সি বলেন, “অ্যাঞ্জেলিনা জোলি জিয়া চরিত্রে অভিনয় করে ভালো পরিচিতি লাভ করেছেন, এবং এটা কেন, তা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। জোলি তাঁর চরিত্রাভিনয়ে ছিলেন বিপ্লবীতাঁর অংশগুলো তিনি চিত্রিত করেছেন একধরণের দৃঢ়তা, আকর্ষণীয়তা, এবং বেপরোয়াত্বের সাথেএই চলচ্চিত্রে তাঁর ভূমিকাটি খুব সম্ভবত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য অভিনয়।চলচ্চিত্রটির জন্য পরবর্তী বছরে জোলি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন, এবং এমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। সেই সাথে তিনি তাঁর প্রথম স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারটিও লাভ করেন। লি স্ট্যাসবার্গের মেথড অ্যাক্টিং দ্বারা জোলি প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই তাঁর প্রথম দিকের ছবিগুলোতে কাজ করার সময় তিনি ছবির চরিত্রটির মতো জীবনযাপন করতেন। আর এধরণের চেষ্টা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর খ্যাতিবৃদ্ধি করে। জিয়াতে অভিনয়ের সময় জোলি তাঁর স্বামী জনি লি মিলারকে বলেছিলেন যে, তিনি তাঁকে ফোন করতে পারবেন না। তাঁর ভাষায়, “আমি তাঁকে বলতাম: ‘আমি নিঃসঙ্গ, আমি মারা যাচ্ছি, আমি সমকামী; তোমার সাথে আমার সামনের কয়েক সপ্তাহ দেখা হবে না।’”
জিয়া-তে অভিনয় শেষে জোলি তাঁর আবাসস্থল পরিবর্তন করে নিউ ইয়র্কে চলে যান এবং কিছুদিনের জন্য অভিনয় থেকে বিরতি নেন, কারণ তিনি তখন অনুভব করছিলেন যেন তাঁরকিছুই দেবার নেই তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে চলচ্চিত্র পরিচালনার ওপর পড়াশোনা শুরু করেন এবং লিখিত ক্লাসগুলোতে নিয়মিত অংশ নিতে থাকেন। ইনসাইড দি অ্যাক্টরস স্টুডিও নামে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করেন এই বলে যে—“আমাকে আবার টেনে তোলার জন্য এটাই ভালো উপায়
১৯৯৮ সালে জোলি পুণরায় চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন হেল কিচেন চলচ্চিত্রে গ্লোরিয়া ম্যাকনিয়ারি চরিত্রে অভিনয়ের মাধমে, এবং পরে তাঁকে দেখা যায় চলচ্চিত্র প্লেয়িং বাই হার্ট-এ। সেখানে তাঁকে নেওয়া হয়েছিলো একটি দলের সদস্য হিসেবে, এবং দলটিতে আরও ছিলেন শন কনারি, জিলিয়ান অ্যান্ডারসন, রায়ান ফিলিপ জন স্টুয়ার্ট চলচ্চিত্রটি সমাদৃত হয়; বিশেষ করে জোলির অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল এসম্পর্কে মন্তব্য করে, “জোলি এখানে পুণর্নির্মিত একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা একটি বেপরোয়া ক্লাবারের কথা মনে করিয়ে দেয়, যে কিনা শিখছে কী নিয়ে সে জুয়া খেলতে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জোলি ন্যাশনাল বোর্ড অফ রিভিউয়ের ব্রেকথ্রু পারফরমেন্স পুরস্কার লাভ করেন
১৯৯৯ সালে জোলি মাইক নিউয়েল পরিচালিত কমেডি-ড্রামা চলচ্চিত্র পুশিং টিন- অভিনয় করেন। সেখানে তাঁর সহ-অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন জন কুস্যাক, বিলি বব থর্নটন, এবং কেট ব্লানচেট জোলির চরিত্রটি ছিলো থর্নটনের আবেদনময়ী স্ত্রীর। চলচ্চিত্রটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে, বিশেষ করে জোলির চরিত্রটি সমালোচিত হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট সমালোচনা করে লেখে, “ম্যারি (অ্যাঞ্জেলিনা জোলি) লেখকের সম্পূর্ণ হাস্যকর এক সৃষ্টি। মেয়েটি মুক্ত আত্মার অধিকারী, যে কিনা মৃত জবাফুলের ওপর চোখের পানি ফেলে, গাদাখানেক ফিরোজা পাথরের আংটি পরে থাকে, রাসেল সারারাত বাড়ির বাইরে কাটালে একাকী বোধ করে।এরপর তিনি ডেনজেল ওয়াশিংটনের সাথে জেফ্রি ডেভারের অপরাধ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্র দ্য বোন কালেক্টর- অভিনয় করেন। এখানে জোলির চরিত্রটি ছিলো অ্যামেলিয়া ডোনাঘি নামক এক পুলিশ কর্মকর্তার। ডোনাঘির বাবাও পুলিশে ছিলেন এবং তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। ওয়াশিংটনকে, জোলি, একজন সিরিয়াল কিলারকে অনুসরণ করতে সাহায্য করে। ছবিটি বিশ্বব্যাপী ১৫. কোটি মার্কিন ডলার আয় করলেও সমালোচকদের দৃষ্টিতে এটি সফল হতে পারেনি। ডিট্রয়েট ফ্রি প্রেস মন্তব্য করে, “জোলি সবসময়ের মতো এখানেও সুন্দর অভিনয় উপহার দেবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে চরিত্রটি তাঁর ছিলো না।
জোলি বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্রের অত্যন্ত কর্মস্পৃহা সম্পন্ন একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তিনি যেন একটা খোলা কামান, যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবকিছু চূর্ণ করে দেওয়া।
চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্ট; গার্ল, ইন্টারাপ্টেড চলচ্চিত্রে জোলির অভিনয় সম্পর্কে মন্তব্য করে
পরবর্তীতে জোলি গার্ল, ইন্টারাপ্টেড (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে লিসা রো চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবির কাহিনী ছিলো সুসানা কায়জেন নামক একজন মানসিক রোগীকে ঘিরে। চরিত্রটি নেওয়া হয়েছিলো কায়জেনের একই নামের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ গার্ল, ইন্টারাপ্টেড থেকে। ছবিটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন উইনোনা রাইডার, এবং আশা করা হয়েছিলো এর মাধ্যমেই তিনি আবার ভালোভাবে অভিনয়ে ফিরে আসবেন, কিন্তু বাস্তবে এটি জোলির জন্য বর হয়ে আসে, এবং তিনি হলিউডে তাঁর শেষ আলোচিত সাফল্যটি লাভ করেন এটির জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে, তৃতীয়বারের মতো গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, দ্বিতীয়বারের মতো স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার, এবং প্রথমবারের মতো একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এই চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় সম্পর্কে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের মন্তব্য, “দৃঢ়তাপূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসেবে জোলি অসাধারণ, কিন্তু এখানে জোলির অভিনয় ছিলো পুণর্বাসনকেন্দ্রের ডাক্তারদের চেয়েও অনেক বেশি যান্ত্রিক।
২০০০ সালে, জোলি তাঁর জীবনের প্রথম গ্রীষ্মকালীন ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র গন ইন সিক্সটি সেকেন্ডস- অভিনয় করেন, যেখানে তাঁর চরিত্রটি ছিলো গাড়ি চোর নিকোলাস কেজের সাবেক প্রেমিকা সারাসোয়েওয়েল্যান্ডের। ছবিতে জোলির ভূমিকা উপস্থিতি ছিলো খুবই অল্প এবং ওয়াশিংটন পোস্ট সমালোচনা করে লেখে, “ ছবিতে সে যা কিছু করেছে তা হচ্ছে, যাওয়া-আসা, ঘুরে বেড়ানো, আর দাঁতগুলোকে ঘিরে থাকা তাঁর হৃষ্টপুষ্ট ঠোঁটযুগলকে উত্তেজনাকরভাবে নাড়ানোপরবর্তীতে জোলি ব্যাখ্যা করে বলেন, লিসা রো-এর মতো একটি গুরুগম্ভীর চরিত্রে অভিনয়ের পর সেটা ছিলো অনেকটা স্বাগত উপস্থিতির মতো। চলচ্চিত্রটি ছিলো তখন পর্যন্ত জোলির অভিনীত সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। বিশ্বব্যাপী এটির আয় ছিলো ২৩. কোটি মার্কিন ডলার

No comments:

Post a Comment

thanks for your comment